
Zayedul Islam
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শশীদল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উনিশ শতকের প্রখ্যাত জনহিতৈষী জমিদার বাবু তারক চন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে ১৮৮০ সালে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা আজ এলাকার অন্যতম স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাবু তারক চন্দ্র চৌধুরী এলাকার মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮৮০ সালে নিজস্ব জমি দান করে একটি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। সেই সময়ে গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল খুবই সীমিত। বাঁশ ও টিনের তৈরি সাধারণ কাঠামোয় শুরু হওয়া এই বিদ্যালয়টিতে মূলত বাংলা ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান, অঙ্ক এবং নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা হতো। প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব থাকলেও, জ্ঞানপিপাসু স্থানীয় ব্যক্তিরাই শিক্ষার্থীদের পথ দেখাতেন।
পরবর্তীতে, ১৯৩৫ সালে বিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ উচ্চ বিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে এবং "শশীদল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়" নামে পরিচিতি পায়। সময়ের সাথে সাথে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নত হয়েছে, যুক্ত হয়েছে বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। বর্তমানে বিদ্যালয়টি জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গুণগত শিক্ষা প্রদান করছে।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, "আমাদের বিদ্যালয়ের দীর্ঘ এবং গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। বাবু তারক চন্দ্র চৌধুরীর স্বপ্নকে ধারণ করে আমরা শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি তাদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশেও সচেষ্ট রয়েছি।"
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলেন, "শশীদল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমাদের এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক। বহু প্রজন্ম ধরে এই বিদ্যালয় অসংখ্য গুণী শিক্ষার্থী তৈরি করেছে, যারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন।"
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক সভা ও বিজ্ঞান মেলার মতো সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশে এই সকল কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে শশীদল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় আজও ব্রাহ্মণপাড়া তথা কুমিল্লা জেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে নিজেদের স্থান ধরে রেখেছে এবং আগামী দিনেও জ্ঞানের আলো ছড়াতে বদ্ধপরিকর।